কোভিড-১৯ টিকায় প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট ও গর্ভপাতের সম্ভাবনা ৯৯%?

কোভিড-১৯ টিকা নিলে নারীর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট এবং গর্ভপাত হতে পারে- এমন অনেক তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে রয়েছে। যদিও এসবের সপক্ষে কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনো।
নারীর গর্ভকালে তাকে যেকোনো পরামর্শই খুব সতর্কতার সঙ্গে দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আসলে এই শারীরিক অবস্থায় আগে ইনজেকশন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হতো। তবে নির্ভরযোগ্য অনেক তথ্য মেলায় এখন সেসব পরামর্শ অনেকটাই অচল। বরং করোনাভাইরাস অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠায় তাদেরকে টিকা নেওয়ায় উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।
কোভিড টিকায় নারীর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট এবং গর্ভপাত হতে পারে বলে যেসব দাবি করা হচ্ছে সেগুলোর সত্যাসত্য যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে বিবিসি।
জাপানে এক গবেষণা প্রতিবেদনের ভুল পাঠ থেকে এই বিভ্রান্তি।
ওই গবেষণায় মানুষকে টিকার যে ডোজ দেওয়া হয় তার চেয়ে ১২৯৯ গুণ বেশি ডোজ দেওয়া হয় ইঁদুরকে। ৪৮ ঘণ্টা পর টিকার পুরো ডোজের মোট শূন্য দশমিক এক শতাংশ প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায়।
শরীরের যেখানে ইনজেকশন দেওয়া হয় প্রথম এক ঘণ্টা পর সে অংশে ৫৮ শতাংশ ডোজ পাওয়া যায়। ৪৮ ঘণ্টা পর এর পরিমাণ কমে হয় ২৬ শতাংশ। ৪৭ ঘণ্টা পর যকৃতে ১৫ শতাংশ টিকার ডোজ উপস্থিত মেলে।
টিকার ডোজে চর্বির বুঁদ বুঁদ থাকে, যা আসলে ভাইরাসের জেনেটিক তথ্য বহন করে। জরায়ুতে এই চর্বির অংশ মিলেছিল।
মূলত গবেষণার এই অংশ থেকেই কিছু মনগড়া তথ্য ছড়ানো হয়। এমনটাও বলা হয়েছিল যে ওই গবেষণার তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে, অথচ গবেষণাটি অনলাইনে সবার জন্য উন্মুক্ত।
টিকা নিলে গর্ভপাত হবে?
ভিত্তিহীন দাবি। যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) ইয়েলো কার্ড স্কিম এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন অ্যাডভার্স ইভেন্ট রিপোর্টিং সিসটেমে (AVAERS) কয়েকজন রোগীর গর্ভপাতের রেকর্ড দেখিয়ে এমন দাবি করা হয়।
এই দুই জায়গায় যে কেউ রিপোর্ট করতে পারে; যদিও সবাই শেষ পর্যন্ত তা করে না। আর যে কয়েকটি গর্ভপাতের অভিযোগ করা হয়েছে সেসবের কারণ টিকা নয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে টিকা নেওয়ার পর গর্ভপাতের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার হার সাড়ে ১২ শতাংশ; যা অন্যসব গর্ভপাত পরিসংখ্যানের মতই।
এ নিয়ে ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের রিপ্রোডাকটিভ ইমিউনোলজিস্ট ভিক্টোরিয়া মেল বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরল টিকার এমন সব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো জানার জন্য এই রিপোর্টিং পদ্ধতি খুব কাজের। আর এভাবেই অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার কয়েকটি ঘটনা নজরে আসে।
যদি টিকা নেওয়া নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেক বেশি অভিযোগ জমা পড়ত তবে অবশ্যই দ্রুত এ নিয়ে তদন্ত হত। কিন্তু আমলে নেওয়ার মত বেশি সংখ্যক অভিযোগ জমা পড়েনি।
টিকা নিলে গর্ভ ফুলের ক্ষতি হয়?
এই দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ মেলনি।